ঢাকা,শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪

রামুর ঈদগড়ে ৮ বসতবাড়ি ও সড়কে ডাকাতি ॥ অপহৃত ৩, জনমনে চরম আতংক…..

dakati.সোয়েব সাঈদ, রামু :::

কক্সবাজারের রামু উপজেলার ঈদগড়ে ৮ বসতবাড়ি এবং ঈদগড়-ঈদগাওঁ সড়কে যাত্রীবাহী বাসে ডাকাতি সংগটিত হয়েছে। সড়কে ডাকাতির পাশাপাশি শসস্ত্র সন্ত্রাসীরা যাত্রীবাহি বাসের ৩ জন যাত্রীকে অপহরণ করেছে। বসত বাড়িতে ডাকাতি চলাকালে ডাকাতের গুলিতে ১ জন আহত হয়েছে। বেশকিছুদিন শান্ত থাকার পর ফের বড় ধরনের ডাকাতি ও অপহরণের ঘটনায় এলাকার জনমনে চরম আতংক বিরাজ করছে।

ঈদগড় ইউনিয়নের ঘিলাতলি গ্রামের রুহুল আমিন, শাহ আলম ও জালাল আহমদের বাড়িতে ২২ আগষ্ট রাত দশটার দিকে ডাকাতির ঘটনা ঘটে। শসস্ত্র ডাকাতদল এ তিনটি বাড়ির দরজা ভেঙ্গে ভিতরে প্ররেশ করে বাড়ির সদস্যদের মারধর করে ব্যাপক লুটপাট চালায়। ডাকাতি চলাকালে ঘিলাতলি গ্রামের মৃত নাজির হোসনের পুত্র শাহ আলম পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। এসময় ডাকাতরা তাকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। এতে শাহা আলম গুলিবিদ্ধ হন। একই রাত সাড়ে ৩ টায় ঈদগড় ক্যাম্পচর গ্রামের আমির হোছন নুরুল আজিম ও পুর্ণগ্রামের ছৈয়দ আলম সোনা মিয়া ওগুরা মিয়ার বাড়ীতে ডাকতি সংঘটিত করে।

এদিকে গতকাল মঙ্গলবার (২৩ আগস্ট) সন্ধ্যা ৭ টায় ঈদগড়-ঈদগাওঁ সড়কের ধুমছাকাটা এলাকায় ঈদগড়মুখি হিললাইন (কক্সবাজার ছ-১১-০১০৬) মিনিবাস থামিয়ে যাত্রীদের সর্বস্ব লুট করে ডাকাতদল। লুটপাট শেষে ডাকাতরা ওই বাসের তিন যাত্রীকে অপহরণ করে। অপহৃতরা হলেন, নাইক্ষ্যংছড়ি বাইশারী এলাকার মাস্টার মোতাহার আহমদের পুত্র মোহাম্মদ রাশেদ, মোবাইল সামগ্রী বিক্রেতা নেজাম উদ্দিন ও ঈদগড় কাটাজঙ্গল গ্রামের মৌলানা হাবিবুর রহমান।

বাসটির চালক মোহাম্মদ জানিয়েছেন, ডাকাত দলের সদস্য ১৬/১৮ জন হবে। এরমধ্যে কয়েকজনের হতে হাতে লম্বা বন্দুক ও ধারালো অস্ত্র ছিলো ছিল।

ঈদগড় ক্যাম্পের আইসি ফিরোজ জানান, ডাকাতি ও অপহরণের ঘটনায় জড়িতদের গ্রেফতারে এবং অপহৃতদের উদ্ধারে পুলিশ ও জনতার অভিযান চলছে।

জানা গেছে, পুলিশী তৎপরতায দীর্ঘ দিন ঈদগড় এলাকায় ডাকাতি-অপহরণের ঘটনা ঘটেনি। এখন আসন্ন ঈদুল আযহাকে ঈদকে সামনে রেখে ডাকাত দল আবারো সংঘটিত হয়ে ডাকাতি অপহরণ শুরু করেছে। এ কারনে ঈদগড়বাসী এখন চরম আতংকে দিন কাটাচ্ছে।

 #############################

 রামুতে ভূগর্ভস্থ পানি সাশ্রয়ী আউশ ধান কর্তন শুরু

সোয়েব সাঈদ, রামু ::

কক্সবাজারের রামুতে প্রথমবারের মতো ভূগর্ভস্থ পানি সাশ্রয়ী এবং পরিবেশ বান্ধব আউশ ধান কর্তন শুরু হয়েছে। রামু উপজেলার কাউয়ারখোপ ইউনিয়নের উখিরয়ারঘোনায় এলাকায় আউশ ধান কর্তনের মাধ্যমে শুরু হয়েছে আউশ ধান চাষের সফল সূচনা।

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, দিন দিন পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় ও বোরোর উৎপাদন মূল্যবৃদ্ধি পাওয়ায় কৃষি মন্ত্রণালয় প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করে। ওই প্যাকেজের আওতায় রামুতে আউশ ধানের চাষ করা হয়েছে । কৃষি অফিসের দাবি, নিজেদের প্রয়োজনে কৃষকরা আউশ ধান চাষে মনোযোগী হবেন। কেননা বোরো ক্ষেতে ১৬-২০ বার সেচ দিতে হয়। আর আউশ ধান চাষে সর্বোচ্চ ৪ বার সেচের প্রয়োজন হয়। শুধু তাই নয়, আউশ ধান চাষের আগে আরও একটি রবি ফসল কৃষকরা ঘরে তুলতে পারেন। এ কারণে ধরে নেয়া যেতে পারে কৃষকরা আউশ ধান চাষে আগ্রহী হবেন। যাতে কৃষকের লাভবান হওয়ার শতভাগ সম্ভাবনা রয়েছে।

গত শনিবার (২০ আগস্ট) বেলা ১২টায় রামুর উখিরয়ারঘোনায় আউশ ধান কর্তনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন কক্সবাজার জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আ.ক.ম. শাহরীয়ার।

রামু উপজেলার উপজেলা কৃষি অফিসার আবু মাসুদ সিদ্দিকীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন কক্সবাজার সদর উপজেলার উপজেলা কৃষি অফিসার মোহাম্মদ এনায়েত-ই-রাব্বি।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপপরিচালক আ.ক.ম. শাহরীয়ার বলেন, আউশ ধান চাষে স্বল্প পরিমাণ ভূগর্ভস্থ পানি ব্যবহার হয়ে থাকে। আউশ ধান চাষে কৃষকরা অভ্যস্ত হয়ে গেলে পরিবেশের মারাত্মক বিপর্যয় থেকে রক্ষা পাওয়া যেতে পারে। ভূগর্ভস্থ পানি অতিরিক্ত উত্তোলণের ফলে পানির স্তর ক্রমেই নীচে নেমে যাচ্ছে। তাই পানির স্তর আর পরিবেশ রক্ষায় আউশ ধান চাষ একটি সময়োপযোগি কৃষি ব্যবস্থা।

তিনি আরো বলেন, কৃষি ও কৃষকের উন্নয়নে বর্তমান সরকার যুগোপযোগী পদক্ষেপ নিয়েছে। এ কারনে কৃষিক্ষেত্রে আধুনিক ও উন্নত জাত ব্যবহারের মাধ্যমে অতীতের চেয়ে এখন বেশী ফসল উৎপাদন সম্ভব হচ্ছে। সারাদেশে আউশ ধান উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে সরকার প্রণোদনা কর্মসূচি হাতে নিয়েছে।

অনুষ্ঠানে রামু উপজেলার উপজেলা কৃষি অফিসার আবু মাসুদ সিদ্দিকী বলেন, অতীতে রামুতে কোন আউশ ধানের আবাদ হতো না। সাধারণত বোরো ধান কর্তনের পর কিছু পরিমান সবজী আবাদ ব্যতিত অধিকাংশ জমি পতিত থাকতো। ফলে রামুতে আউশ ধান আবাদের প্রচলন হওয়ায় পতিত জমির সঠিক ব্যবহারসহ ধানের উৎপাদন বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে।

উখিয়ারঘোনার আউশ প্রদর্শণীর কৃষক আবুল হোছন জানালেন, চলতি মৌসুমে নতুন ধান উৎপাদন করতে পেরে তিনি খুবই আনন্দিত। তিনি বলেন ধান পাকার মৌসুমে বাবুই পাখির বেশ আক্রমন হয়। তবে এই ধান ব্যাপকভাবে চাষাবাদ হলে এই পাখির আক্রমন অনেকটাই কমে আসবে।

কৃষি অফিসের দেয়া তথ্য মতে, ১৬ মার্চ থেকে ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত আউশ ধানের চারা রোপণের উৎকৃষ্ট সময়। এসময়ের মধ্যে চারা রোপণ করতে পারলে ফলন ভালো পাওয়া যায়। এক্ষেত্রে ২১ দিন বয়সের চারা রোপণ করা শ্রেয় বলে উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তারা জানান। আর চারা গজানো থেকে শুরু করে ১১০দিনের মধ্যে আউশ ধান কাটা-মাড়াই করা যায়। বোরোর ফলনের চেয়ে আউশ ধানের ফলন কিছুটা কম হয়। কিন্তু উৎপাদন খরচের কথা চিন্তা করলে দেখা যায় বোরোর চেয়ে আউশ ধানের চাষ খুবই লাভজনক। কেননা বোরোর মোট উৎপাদন খরচের ৮ ভাগের মাত্র ২ ভাগ খরচ দিয়ে আউশ ধানের চাষ করা যায়। একারণে নির্দ্বিধায় বলা যেতে পারে আউশ ধান চাষে কৃষকের ক্ষতির কোন আশঙ্কা নেই, বোরোতে যেটা হয়ে থাকে।

উল্লেখ্য চলতি খরিফ-১/২০১৬-১৭ মৌসুমে উফশি আউশ ও নেরিকা আউশ উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রণোদন কর্মসূচির আওতায় উপজেলা কৃষি অফিস, রামু থেকে গত ২২ এপ্রিল ১০০ জন কৃষকের মাঝে বিনামূল্যে জনপ্রতি ৫ কেজি করে উফশি আউশ ধানের বীজ, ২০ কেজি ইউরিয়া, ১০ কেজি ডিএপি, ১০ কেজি এমওপি সার এবং সেচ খরচ বাবদ মোবাইল ব্যাংকিং এর মাধ্যমে ৪০০ টাকা প্রদান করে।

আউশ ধান কর্তন অনুষ্ঠানে উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন ও মোহাম্মদ আকবর হোসেন সিদ্দিকী এবং স্থানীয় কৃষকগন উপস্থিত ছিলেন।

পাঠকের মতামত: